দৈনিক প্রত্যয় ডেস্কঃ ভাগ্য বদলাতে গিয়ে লিবিয়ায় মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের শিকার বংলাদেশি তরুণেরা, অহত হয়েছেন অনেকে। দুর্বৃত্তের গুলিতে গুরুতর আহতরা লিবিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন চুয়াডাঙ্গার দুই তরুণ।
এদের মধ্যে একজন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদা ইউনিয়নের খেজুরতলা গ্রামের বকুল হোসেন (২৫)।
আহত বকুল হোসেনের মা মোমেনা খাতুন বলেন, ২০১৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর (বাংলা ২৭ভাদ্র) বকুল হোসেন স্থানীয় দালালের মাধ্যমে লিবিয়া যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশে যান। কয়েকদিন ঢাকায় থাকার পর সে লিবিয়ার উদ্দেশে রওনা দেয়। বকুলের বিদেশ যাওয়ার আগ্রহ তৈরি হয় গ্রামের অনেকে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন বিদেশ গিয়ে। টাকা উপার্জন করেছে তারা, বাড়ি তৈরি ও গ্রামে জমি কিনেছেন। সেই স্বপ্ন নিয়েই বিদেশ যায় সে। দরিদ্র পিতার কষ্ট লাঘব করতেই বিদেশ যাওয়া। লিবিয়া গিয়ে বেশ ভালোই ছিলেন।
৩ লাখ ৭০ হাজার টাকায় লিবিয়া যাওয়ার জন্য চুক্তি করেন দালালের সাথে। বকুলের সাথে লিবিয়া গিয়েছিল তার মামাতো, ফুপাতো ও খালাতো ভাই। ফরিদপুর জেলার দালাল বক্কর সরদারের মাধ্যমে লিবিয়া যায় কাজের সন্ধানে বকুল।
সেখানে যাওয়ার পর কাজ করতেন। বাড়িতে সে তিনবার টাকা পাঠিয়েছেন। আর টাকা জমিয়ে ইউরোপের দেশ ইতালিতে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল। মানবপাচারকারী চক্রের মাধ্যমে ইতালিতে যাওয়ার পথে তাদের অপহরণ করেন। চক্রটি তাদের একটি ঘরে আটকে রাখে। সেখানে মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা তাদের উপর গুলি চালালে অনেকে মারা যায় ও অনেকে আহত হন।
তিনি আরও জানান, গত ২৮ মে বৃহস্পতিবার রাতে বকুল লিবিয়া থেকে বাড়িতে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। সে বলে, মা আমরা ভালো নেই। অপহরণের পর আমাদের একটি ঘরে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। বন্দিশালা থেকে মুক্ত হতে পারি সে দোয়া করো। এর বেশি মায়ের সাথে কথা হয়নি বকুলের।
গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় লিবিয়ার ত্রিপলীর একটি হাসপাতালে অন্যদের সাথে সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ছেলের আহত হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকে মায়ের কান্নায় গ্রাম জুড়ে নিরবতা নেমে এসেছে। ছেলের কথা বলতে বলতে বারবার মা মূর্ছা যাচ্ছেন।
লিবিয়ার বেনগাজি থেকে বকুল হোসেনের মামাতো ভাই গাফফার আলি বলেন, প্রায় ১০ দিন আগে বকুল বেনগাজী থেকে ত্রিপলীতে যাওয়ার জন্য চলে আসে। সেখানে কিছু দিন থাকার পর তার ইতালি যাওয়ার কথা ছিল দালালের মাধ্যমে। ত্রিপলী যাওয়ার সময় পাচারকারীদের গুলিতে আহত হয়েছে বলে আমি শুনেছি।
আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দারুস সালাম বলেন, কয়েক মাস আগে সে দালালের মাধ্যমে বিদেশ যায়। বিদেশ যাওয়ার আগে মাকে বলে টাকা দেওয়ার সময় চেয়ারম্যানকে জানাতে। লিবিয়া পৌঁছানোর পর তার মা চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে দালালের ব্যাংক হিসাবে টাকা দেন।
আলমডাঙ্গা থানার ওসি আলমগির কবির জানান, লিবিয়ায় আহত যুবকের বাড়িতে আমি লোক পাঠিয়েছি খবর নেওয়ার জন্য। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বকুল হোসেনের সাথে চুয়াডাঙ্গার বাপ্পী নামে একজনও গুরুতর আহত হয়ে ত্রিপলীর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ডিপিআর/ জাহিরুল মিলন